আজ ১৪৪০ হিজরির ২০ রমজান। ইতেকাফে আগ্রহীরা মুমিন মুসলমান ইফতারের আগেই মসজিদে মসজিদে উপস্থিত হবে। নারীরা ঘরের নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করবে। লক্ষ্য একটাই- আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করা। সন্ধ্যায় পড়া হবে কুরআনের ২৪তম পারা। পরকালে আল্লাহর ন্যায় বিচারের তেলাওয়াতে মুখরিত হবে মসজিদ। হৃদয়ে অশ্রু ঝরাবে মুমিন।
সুরা যুমার (৩২-৭৫), সুরা মুমিন এবং সুরা হা-মিম আস-সাজদার ৪৬ আয়াত পর্যন্ত আজকের তারাবিতে পড়া হবে। শেষ হবে ২৪তম পাড়ার তেলাওয়াত।
মহান আল্লাহ অসংখ্য গুণাবলী মহত্ব ও করুণার বর্ণনা শুনে তারাবিহ নামাজের মুসল্লি ও ইতেকাফকারীরা আত্মহারা হয়ে যাবে।
যাতে মানুষের মুক্তির নানাদিক সহজ করে তুলে ধরেছেন আল্লাহ তাআলা। পরকালে আল্লাহ তাআলা তার বান্দারে প্রতি কতবেশি ক্ষমাশীল ও দয়াময় হবে সে বর্ণনাও ওঠে এসেছে আজকের তেলাওয়াতে।
আরও পড়ুন > নামাজ পড়বেন যেভাবে
আজকের তারাবিহ নামাজে তেলাওয়াত করা সুরাগুলোর সংক্ষিপ্ত আলোচ্যসূচি তুলে ধরা হলো-
সুরা যুমার : আয়াত ৩২-৭৫
এ সুরাটিও মক্কায় অবতীর্ণ। সুরাতুল গোরাফ নামেও এ সুরাটি পরিচিত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হলেও হজরত হামযা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হত্যাকারী সম্পর্কিত যে তিনটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, আয়াত তিনটি মদীনায় অবতীর্ণ।
এ সুরার অধিকাংশ বক্তব্য তাওহিদ সম্পর্কিত। যারা তাওহিদে বিশ্বাস করে, তাদের পুরস্কার; যারা অবিশ্বাস করে তাদের শাস্তির কথাও এ সুরায় ঘোষিত হয়েছে। মানবতার কলংক শিরক তথা অংশীবাদের বাতুলতা ঘোষণা করা হয়েছে।
সর্বশেষ আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিবসে বান্দাদের মধ্যে ন্যায় বিচারভিত্তিক ফয়সালা করবেন। যাতে আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠত্ব, মাহাত্ম্য এবং গুণাবলী সন্নিবেশিত হয়েছে।
আরও পড়ুন > রোজায় ইফতার বিতরণ ও আর্থিক অনুদানের তাৎপর্য
সুরা মুমিন : আয়াত ৮৫
সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। আল্লাহ তাআলা শুরুতেই তাঁর অসাধারণ গুণাবলী দিয়ে সুরাটি আরম্ভ করেছেন যে, তিনি পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী, গোনাহ মার্জনাকারী, তাওবা কবুলকারী, অবাধ্য বিদ্রোহীদের কঠোর শাস্তি প্রদানকারী।
তিনি অনন্ত অসীম ক্ষমতাবান। তাঁর কানো শরীক নাই। তিনি একমাত্র উপাস্য। সমগ্র মানব জাতীকে পরিশেষে তাঁর নিকটই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ এ সুরায়ও তাওহিদ বা একত্ববাদের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এ সুরায় আল্লাহ তাআলা তিনটি বিষয়ের ওপর আলোচনা করেছেন-
– তাওহিদ তথা একত্ববাদ সম্পর্কে : তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই; তাওহিদের বর্ণনা কোথাও দলিল-প্রমাণ সাব্যস্ত করেছেন; আবার কোথাও তাঁর আদেশ প্রদান করেছেন। এমনিভাবে কুফর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছেন। সর্বোপরি এ সুরায় তাওহিদের ধারক ও বাহকদের প্রশংসা ও সুসংবাদ রয়েছে এ সুরায়।
– বিবাদ সৃষ্টিকারী কাফির মুশরিকদের ধমকি প্রদান : সত্যের ব্যাপারে এ বিবাদ সৃষ্টিকারীরা ব্যাপক, যারা বিশ্বনবিকে অস্বীকার করতেন। এ কারণে তাদেরকে ইহকালীন লাঞ্ছনা ও পরকালীন কঠোর শাস্তির ধমকি প্রদান করা হয়েছে।
– মক্কার কাফের মুশরিক কর্তৃক বিশ্বনবি যখন নানান লাঞ্ছনা-প্রবঞ্চনা, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, অপপ্রচার এমনকি জীবন নাশের ব্যর্থ পরিকল্পনার সময় বিচলিত ঠিক তখনই আল্লাহ তাআলা তাঁর অসহায়ত্ববোধকে দূরীকরণ এবং স্বীয় মিশন পরিচালনায় অটল এবং অবিচল থাকার জন্য এ সুরার মাধ্যমেই সান্ত্বনা প্রদান করেন। তাই এ সুরায় স্থান পায় হজরত মুসা ও মরদুদ ফিরাউনের মধ্যকার ঘটনা।
আরও পড়ুন > নামাজে দ্রুত রুকু-সেজদা ও এদিক-ওদিক তাকানো যাবে কি?
সুরা হা-মিম আস-সাজদা : আয়াত (১-৪৬)
মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরাটি সিজদা, হা-মিম আস-সিজদা, মাসাবিহ ও ফুসসিলাত নামে পরিচিত। এ সুরায় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতের বর্ণনা এসেছে। পাশাপাশি মৃত্যুর পর মানুষের যে জীবন আসবে, সে সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে।
তাই যারা বিশ্বনবির প্রতি ঈমান আনয়নে অনীহা প্রকাশ করে এবং তার বিরোধীতা করে, তাদের উদ্দেশ্যে কঠোর সতর্কবানী উচ্চারিত হয়েছে এ সুরায়।
মক্কার কুরাইশদের বিভিন্ন প্রকার লোভনীয় প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সুরা দিয়ে জবাব দিয়েছিলেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।