সাংসদকে নদীভাঙন কবলিত ৭ লাখ মানুষের খোলা চিঠি

পোস্ট এর সময় : ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ , ভিজিটর : ৭

আমরা ৭ লাখ মানুষ বলছি। আমরা নদীভাঙা, ছিন্নমূল, বাস্তুচ্যূত, অসহায়, ঠিকানাহীন মানুষ বলছি। হ্যাঁ, আমরা আমাদের অধিকারের কথাই বলতে চাচ্ছি। লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সাংসদ, শ্রদ্ধাভাজন মেজর (অব.) আবদুল মান্নান- আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন, মেঘনার অব্যাহত ভাঙন তামাশায় যুগ যুগ ধরে আপনার সংসদীয় আসনটি দেশের মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে। নদীর অস্বাভাবিক আচরণে প্রতিনিয়ত নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে মানুষের সহায়-সম্বল, তিলে তিলে গড়া মানুষের স্বপ্নের সম্পত্তি। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, নদীভাঙা মানুষগুলো কতো কষ্টে, কতো বেদনাময় সময় পার করছে। তবে হ্যাঁ, যাদের দৃষ্টি গভীর, তারাই কেবল মানুষগুলোর কষ্ট গভীরভাবে বুঝতে পারছে।

যে মানুষটির ধন-সম্পদের ছিল না কোন অভাব, ছিল বিশাল অট্টালিকা। সে মানুষটি আজ পথের ভিখারি! মানুষ কোন সমস্যায় পড়ে যদি সম্পদ হারায়, তখন মানুষ নিজেকে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দিতে পারে। কিন্তু কোন দোষ ছাড়া, অপরাধ ছাড়া নিজের কষ্টে গড়া সম্বল নিমিষেই নদীর গহীন তলদেশে বিলীন হতে দেখে নিশ্চয়ই নিজকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব কষ্টের। যে বেদনা ওই মানুষটি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ হয়তো সেভাবে বুঝবেন না।

লেখালেখির নেশা থেকে নদীভাঙন কবলিত ১৭ কিলোমিটার তটরেখার মেঘনার কূলে কূলে আমি হেঁটেছি। অসংখ্য ছবি ক্যামেরাবন্দি করে ভার্চুয়াল জগতে ছড়িয়ে দিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের প্রকাশিত জার্নালে আজও আমার তোলা নদী ভাঙনের বেশকিছু এবং একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস সংরক্ষিত আছে।

তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে মিশেছি ভাঙনে নিঃস্ব মানুষের জীবনের সাথে। তাদের কষ্ট, দুঃখগুলো যেন আমার জীবনে গেঁথে আছে। এসব মানুষের পক্ষে দু’মুঠো ভাত ঠিকমতো পেটে পৌঁছানো কষ্টসাধ্য হচ্ছে। কখনো কখনো দেখেছি, বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে, তখনো কারো কারো চুলায় এখনো আগুন জ্বলেনি। আবার কখনো দেখেছি, নদীর পাড়ে বসে বসে কেউ ভাঙনে হারানো জমি-জমার সীমানা টানার চেষ্টা করছেন। গালে হাত রেখে চিন্তামগ্ন হয়ে বসে বসে এসব মানুষ কষ্টগুলোকে বুকে নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছেন। খবরের সংগ্রাহক বলে মানুষ ব্যস্ত হয়ে যান তাদের হারানো সম্পদের বিবরণ দিতে। উদ্দেশ্য, ভাঙন থেকে রক্ষায় সরকারের কাছে কষ্টগুলো পৌঁছানো। এসব মানুষ আশায় বুক বাঁধেন শেষ সময়েও হয়তো বাঁধ নির্মাণ হবে, তাদের সম্পদটুকু নদীর হানা থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু আশায় আশায় বুক বাঁধা মানুষের কাছে এসব কিছুই দিন দিন চরম ধোঁয়াশায় রূপ নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *