নিজস্ব প্রতিবেদক:-দেশে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। এর ধারাবাহিকতায় সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের মাসের চেয়ে ২৫ কোটি ৯১ লাখ ডলার বেশি। গত মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ মার্কিন ডলার।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত) ৭ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ২৪৫ কোটি ২১ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ১৯৪ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। আলোচ্য সময়ে ৫০ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বেশি এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জানুয়ারিতে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৬৫ কোটি ৩৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭০ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
অন্যান্য সময়ের মতো এবারও ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। জানুয়ারিতে ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। এরপরেই রয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অবস্থান। ব্যাংকটির মাধ্যমে ১২ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ কোটি ৭১ লাখ ডলার, অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৪২ লাখ ডলার, পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৮৯ লাখ ডলার, এনসিসি ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৫১ লাখ ডলার, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ কোটি ৬২ লাখ ডলার, প্রিমিয়ার ব্যাংক ৬ কোটি ২২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
এদিকে, রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছর ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে প্রবাসীদের উদ্দেশে জানায়, বৈধপথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ করুন, প্রিয়জনকে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ রাখুন। হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধপথে রেমিট্যান্স না পাঠানোর জন্য এভাবে আহ্বান জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে (হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে) প্রেরণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ এবং এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রবাসীদের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও জানায়, আপনাদের অর্জিত মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধপথে না পাঠিয়ে বৈধ পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে প্রেরণ করুন, দেশ গড়ায় মূল্যবান অবদান রাখুন এবং আপনার প্রিয়জনকে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ রাখুন। আরও জানায়, অবৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে প্রমাণ সাপেক্ষে প্রচলিত আইনে বিএফআইইউ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
এছাড়া রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে- বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, সরকার রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা প্রদান, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজীকরণ পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ণ অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সাথে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধকরণ এবং রেমিট্যান্স প্রেরণে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা হয়েছে।
বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। ওই অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার, আগস্টে ১৮১ কোটি ১ লাখ, সেপ্টেম্বর মাসে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ, অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ, নভেম্বর ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ এবং ডিসেম্বরে ১৬৩ কোটি ৬ লাখ, জানুয়ারিতে ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ, মার্চে ১৮৫ কোটি ৯৭ লাখ, এপ্রিলে ২০১ কোটি ৮ লাখ, মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ এবং জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৪ কোটি মার্কিন ডলার। এর আগে, ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।