শাহবাগ শিশু পার্কের সামনে বাবার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে আনুমানিক ৮/১০ বছরের দুই সহোদর রুমেল ও রাসেল। বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশু পার্কে বিভিন্ন রাইডে চড়ার আশা নিয়ে সাভার থেকে এসেছিল ওরা। পার্ক বন্ধ এ কথা শোনার পরেই দুই ভাই কান্নাকাটি শুরু করে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রাসেল ও রুমেলের বাবা আলতাফ হোসেন বলেন, ওদের কান্না দেখে খারাপ লাগছে। ওদের কাছে ওয়াদা করেছিলাম শিশু পার্কে নিয়ে আসব। কিন্তু কবে বন্ধ হল তা জানি না। দেখি, এখন অন্য কোথাও যাওয়া যায় কি-না। সিএনজি ঠিক করে শ্যামলী শিশু মেলা দিকে রওনা হলেও রাসেল-রুমেল যেতে চাইছিল না।
শুধু আলতাফ হোসেনের ছেলে-মেয়েরাই নয়, সকাল থেকে রাজধানীর উপকণ্ঠ গাজীপুর, সাভার নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশায় চড়ে অসংখ্য শিশু ও তাদের অভিভাবক শিশু পার্কে ছুটে আসেন।
ঢাকা ক্লাবের বিপরীত দিকে প্রধান গেটের সামনে এসে প্রাচীর দেখে থমকে দাঁড়ান। সামনের হকারদের মুখে যখন শুনেন গত পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে শিশু পার্ক বন্ধ, তখন রীতিমত আকাশ থেকে পড়েন। শিশু পার্ক থেকে বের হওয়ার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে যখন ভেতরে বিভিন্ন রাইড দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে থাকতে দেখছেন এবং বড় বড় গর্ত খোঁড়া দেখছেন তখন সবাই বিশ্বাস করছেন।
কাকলি নামের এক গৃহবধূ বলেন, অপেক্ষাকৃত কম খরচে গরিবদের বিনোদনের একমাত্র বিনোদন পার্টি বন্ধ রয়েছে- এটি সরকারিভাবে ঈদের আগেই ঘোষণা দেয়া উচিত ছিল। তিনি জানতে চান কবে আবার শিশু পার্ক খুলবে।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় শাহবাগ শিশু পার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু হওয়ায় বর্তমানে পার্কের সব কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। এ কারণে চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে অর্থাৎ পাঁচমাসেরও বেশি সময় ধরে শিশুপার্ক বন্ধ।
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের (তৃতীয় প্রকল্প) অধীনে ৫০০টি ভূগর্ভস্থ গাড়ি পার্কিং, দৃষ্টিনন্দন জলাধারসহ হাঁটারপথ, আন্ডারপাস, মসজিদ ও অত্যাধুনিক রাইডসহ শিশুপার্কের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। প্রকল্প মেয়াদকাল জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯।
অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর প্রকল্প মেয়াদকাল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শেষ হতে আরও দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে ১৯৭৯ সালে ‘শহীদ জিয়া শিশুপার্ক’ নামে পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য পাবলিক সেক্টরে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম এই শিশুপার্কটি ১৯৮৩ সাল থেকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ১৫ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এ পার্ক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন।
শিশু পার্কটিতে ১২টি রাইড ছিল। যেখানে একটি খেলনা ট্রেন, একটি গোলাকার মেরিগো রাউন্ড রাইড ও একাধিক হুইল রাইড ছিল। ১৯৯২ সালে এ পার্কে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে সৌজন্য হিসেবে একটি জেট বিমান দেয়া হয়।